ব্রেকিং নিউজ
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে ,অসহায় ক্রেতারা মসজিদে তালা দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে ১১ মুসল্লিকে হত্যা ক্যান্সার আক্রান্ত স্কুলছাত্রের চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে এলেন "সুন্দরবন নিউজ" ‘কেস খেলবা, আসো অভিনেত্রী নিপুণকে ডিপজল হাদিসের প্রভাষক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সুধা রানীর ইভটিজিংয়ের মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ায় জাবি ছাত্রীকে অর্থদণ্ড এবং দুই ছাত্র বহিষ্কার
×

শামীম আহমেদ : পাবনা জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০/৪/২০২৪, ১০:৫৪:০৬ PM

ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা

ইসলাম মানবজীবনের জন্য রহমত। জাহেলি যুগে আরবে যখন দাস-দাসী ও গরিব শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হতো, তখনই রাসুল (সা.) নিয়ে এসেছিলেন মানবতার বার্তা। একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ইসলামের। এরপর শ্রমিক ও মালিকের সৌহার্দ্যমূলক পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এমন এক বিধানের প্রচলন করেছে ইসলাম, যেখানে দুর্বল শ্রেণিকে শোষণ-নিপীড়নে পিষ্ট করার জঘন্য প্রবণতা নেই। কেননা, ইসলাম হচ্ছে সাম্য ও মানবতার ধর্ম। ইসলামই সমাজে এ কথা বাস্তবায়ন করেছে যে, আল্লাহর বান্দা হিসেবে সবাই সমান। এতে কোনো ভেদাভেদ নেই। এ জন্য বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘অনারবের ওপর আরবের আর আরবের ওপর অনারবের এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের ও কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আল্লাহভীতি ও ধর্ম পালনের দিক দিয়েই বিবেচিত হতে পারে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৯৭৮)।

ইসলাম মানবজীবনের জন্য রহমত। জাহেলি যুগে আরবে যখন দাস-দাসী ও গরিব শ্রমিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হতো, তখনই রাসুল (সা.) নিয়ে এসেছিলেন  মানবতার বার্তা। একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ইসলামের। এরপর শ্রমিক ও মালিকের সৌহার্দ্যমূলক পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে এমন এক বিধানের প্রচলন করেছে ইসলাম, যেখানে দুর্বল শ্রেণিকে শোষণ-নিপীড়নে পিষ্ট করার জঘন্য প্রবণতা নেই। কেননা, ইসলাম হচ্ছে সাম্য ও মানবতার ধর্ম। ইসলামই সমাজে এ কথা বাস্তবায়ন করেছে যে, আল্লাহর বান্দা হিসেবে সবাই সমান। এতে কোনো ভেদাভেদ নেই। এ জন্য বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘অনারবের ওপর আরবের আর আরবের ওপর অনারবের এবং শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের ও কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব শুধু আল্লাহভীতি ও ধর্ম পালনের দিক দিয়েই বিবেচিত হতে পারে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৯৭৮)।

শ্রমিকের প্রতি মমতা

ইসলাম মালিক ও শ্রমিকের জন্য অভিন্ন অন্ন-বস্ত্রের নির্দেশ দিয়েছে। যাতে শ্রমিকের মানসম্মত জীবন-জীবিকা নিশ্চিত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন, সে যেন তাকে তা-ই খাওয়ায়, যা সে খায়। সেই কাপড় পরিধান করায়, যা সে নিজে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যরে অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (বোখারি : ৫৬১৭)। এ হাদিসে শ্রমিক ও মালিক পরস্পরকে ভাই সম্বোধন করে মূলত ইসলাম শ্রেণিবৈষম্যের বিলোপ করেছে। তবে শ্রেণিবৈষম্য বিলোপের নামে মালিক ও উদ্যোক্তার মেধা, শ্রম ও সামাজিক মর্যাদাকে অস্বীকার করেনি ইসলাম। চাপিয়ে দেয়নি নিপীড়নমূলক কোনো ব্যবস্থা। বরং তার ভেতর মানবিক মূল্যবোধ ও শ্রমিকের প্রতি মমতা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে।

শ্রম ও শ্রমিক

শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকের সম্পর্ক, আচার-ব্যবহার কি রকম হবে, সে সম্পর্কে ইসলামের সুন্দর নীতিমালা রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততাপূর্ণ। শ্রমিক ছাড়া মালিক যেমন অচল, তেমনি সবাই মালিক হয়ে গেলে তখন শ্রমিক বলতে কেউ থাকবে না। তা ছাড়া এটা মানুষের বিশেষত্ব যে, কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই মানুষ বলতেই সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ এভাবেই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য কেউ চাইলেও কারও সহযোগিতা ছাড়া জীবন চালাতে পারবে না; কারও না কারও সাহায্য তাকে নিতেই হবে। এখান থেকেই শ্রম ও শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এ কারণেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে চলতে বাধ্য। কেননা, মানুষ সামাজিক জীব। সমাজজীবনের বাস্তবতায় নিজেও যেমন কারও অধীনতা গ্রহণ বা অন্যের সাহায্য নিতে হবে, তেমনি আপনার অধীনেও অনেকে থাকবে এবং অনেককে সাহায্য করতে হবে। হয় আপনাকে হতে হবে শ্রম গ্রহীতা অথবা শ্রমিক। সামাজিকভাবে এভাবে চলতে গিয়ে যারা কায়িক শ্রম বিনিয়োগ করে, দিন শেষে তারা হয় মজুর বা শ্রমিক। আর দুনিয়ার সাধারণ রীতি অনুযায়ী শ্রম গ্রহীতার চেয়ে শ্রম বিনিয়োগকারীরাই সর্বদা বঞ্চনার স্বীকার হয়ে থাকেন। তাদের ঘামঝরানো শ্রমে মালিক-পুঁজিপতিরা টাকার পাহাড় গড়লেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই তারা নানাভাবে নিগৃহীত হন। যদিও হাজার বছর আগে ইসলাম শ্রম গ্রহীতা ও শ্রমিক উভয়ের অধিকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ইসলামের সেই অধিকার আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করি?

শ্রমের মর্যাদা

ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কাজে ও হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ মোটেই লজ্জার ব্যাপার নয়; বরং এ হচ্ছে নবী-রাসুলদের সুন্নত। প্রত্যেক নবী-রাসুলই কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এমনকি উপার্জনের প্রতি স্বয়ং আল্লাহ উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, ‘সালাত শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর।’ (সুরা জুমা : ১০)। মিকদাদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই, যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে ক্রয় করে। নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।’ (বোখারি : ২০২৭)। শ্রমের অনেক ধরন রয়েছে; যদিও মানুষের প্রয়োজনীয় কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। মুচি জুতা সেলাই করেন, দর্জি কাপড় সেলাই করেন, নাপিত চুল কাটেন, জেলে মাছ ধরেন, ধোপা কাপড় পরিষ্কার করেন, ফেরিওয়ালা জিনিসপত্র বিক্রি করেন, তাঁতি কাপড় বোনেন, কুমার পাতিল বানান, নৌকার মাঝি মানুষ পারাপার করেন। এসব কাজ এতই জরুরি যে, কাউকে না কাউকে অবশ্যই কাজগুলো করতে হবে। এখন এসব কাজে যদি কেউই এগিয়ে না আসতেন, তাহলে মানবজীবন অচল হয়ে পড়ত। এ জন্য শরিয়ত সমর্থিত কোনো কাজই নগণ্য নয় এবং যারা এসব কাজ করেন, তারাও হীন বা ঘৃণ্য নন।

মাওলানা শামীম আহমেদ